Ekadashi ব্রত কাহিনী কিভাবে পালন করবেন
একাদশী ব্রত কাহিনী
একসময় মহর্ষি জৈমিনি ঋষি নিজ গুরুদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে গুরুদেব! একাদশীর জন্ম কখন হয়েছিল এবং তার জন্মের উৎসই বা কি? একাদশীর দিন উপবাস পালনের বিধি বা কি? দয়া করে এই ব্রত পালনে কি লাভ এবং কখন এই ব্রত উদযাপন করতে হবে তার বর্নণা করুন । শ্রী একাদশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা কে? একাদশীর নিয়ম পালন না করার অপরাধ কি? দয়া করে এই বিষয়ে আপনার কৃপা বর্ষণ করুন ।”
শ্রীল ব্যাসদেব জৈমিনি ঋষির প্রশ্ন শুনে অপ্রাকৃত আনন্দধামে উন্নিত হয়ে বললেন, “হে ব্রক্ষর্ষি জৈমিনি! একাদশী পালনের ফল প্রকৃতরুপে পরমেশ্বর নারায়ণই শুধু শুদ্ধভাবে বর্ণনা করতে সক্ষম । কিন্তু তোমার প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দেব ।”
সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান পঞ্চ মহাভূত দ্বারা স্থাবর ও অস্থাবর জীবগণকে পৃথীবিতে সৃষ্টি করেন । সেইরুপ মানুষকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাপ পুরুষকে ও তিনি সৃষ্টি করেন । এই পাপ পুরুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গাদি নানা প্রকার পাপ কার্য দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন । তার মস্তকটি ছিল ব্রক্ষহত্যার পাপ, চোখ দুটি নেশায় আসক্তিজনিত পাপ, মুখটি ছিল স্বর্ণচৌর্যজনিত পাপ, কান দুটি সদগুরুর পত্নীতে উপগমন, নাসিকা পরপত্নী হত্যা , হাত দুটি গো-হত্যাজনিত পাপ, গ্রীবা পরধন চৌর্যজনিত পাপ, বক্ষদেশ ভ্রুণ হত্যাজনিত পাপ, নিম্নবক্ষ পরকীয়া উপগমনজনিত পাপ, উদর আত্মীয় হননের পাপ, নাভীমূল অধীনস্থজনকে হত্যার পাপ, কটিদেশ আত্মস্তুতি পাপ , জংঘা গুরুর প্রতি অপরাধ-জনিত পাপ, লিঙ্গ নিজ কন্যা বিক্রয়জনিত পাপ, পশ্চাদ্দেশ গোপন বিষয় প্রকাশ করার পাপ, পদদ্বয় পিতৃ হত্যার পাপ, তার কেশরাজি অন্যান্য পাপ কর্মাদি । এই প্রকার একটি বীভৎস পাপময় জীব সৃষ্টি করেছিলেন । যার শরীর ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, চোখ দুটি পীতবর্ণ । সে পাপিদের অতীব দুর্দশা দান করে ।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রী বিষ্ণু এই পাপ পূরুষকে দেখে নিজ মনে চিন্তা করতে লাগলেন, ‘আমিই জীবগণের সুখ ও দুঃখের স্রষ্টা । আমি তাদের প্রভু, কারণ আমি পাপ পুরুষ সৃষ্টি করেছি, সে অসাধু, প্রতারক এবং পাপিদের দুঃখ-কষ্ট দেয় । এখন এই পাপ পুরুষের নিয়ন্ত্রক সৃষ্টি করতে হবে’। এই সময় ভগবান যমরাজ ও নানা প্রকার নরক সৃষ্টি করলেন । মৃত্যুর পর পাপিদের যমরাজের নিকট পাঠানো হবে এবং তিনি তাদের পাপ অনুসারে বিভিন্ন নরকে যন্ত্রণা ভোগের জন পাঠান । এইরুপ ব্যবস্থা করে পরমেশ্বর ভগবান পক্ষীরাজ গরুড়ে চরে যমরাজের গৃহে উপস্থিত হলেন । যমরাজ বিষ্ণুকে দেখে পাদ্য-অর্ঘ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করলেন ও তাঁকে স্বর্ণ সিংহাসনে বসালেন । পরমেশ্বর বিষ্ণু বসেই দক্ষিণ দিকে বিভিন্ন প্রকার পাপকর্মজনিত শাস্তিপ্রাপ্ত পাপীদের উচ্চ চিৎকার শুনতে পেলেন । এই শুনে বিষ্ণু দক্ষিন দিকের নরকে উপস্থিত হলেন । তাঁকে দেখে নরকবাসীগণ অধিক উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করল । পরমেশ্বর বিষ্ণুর হৃদয় তাদের দূর্দশায় বিচলিত হল । ভগবান বিষ্ণু ভাবলেন, ‘এদের আমি সৃষ্টি করেছি এবং আমার কারণে তারা কষ্ট ভোগ করছে’!
ব্যাসদেব বলতে লাগলেন, ‘ হে জৈমিনি! পরমেশ্বর ভগবান তার পর কি করলেন, শোন । করূণাময় পরমেশ্বর পূর্বের বিচার ধারা পুনঃচিন্তা করলেন । তিনি হঠাৎ একাদশীরুপে আবির্ভূত হলেন । নরকে জীবগণ একাদশী পালনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে পাপ মুক্ত হল ও বৈকুন্ঠ ধামে গমন করল । হে জৈমিনি! একাদশী পরমেশ্বর বিষ্ণু ও পরমাত্মার বিগ্রহে প্রবেহদ নাই । শ্রী একাদশী পালন অতীব শ্রেষ্ঠ কর্ম ও সকল ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ।
শ্রী একাদশী আবির্ভাবের সাথে সাথে পাপ পূরুষ একাদশীর প্রতিকূল প্রভাব অনুভব করল । সে বিষ্ণুর স্তুতি করতে লাগল । বিষ্ণু প্রসন্ন হয়ে তাকে বর দিতে চাইলেন । পাপ পুরুষ বলল, আমি আপনার সৃষ্ট । পাপীর শাস্তি আমার মাধ্যমে দিতে আপনি ইচ্ছা করেছিলেন । কিন্তু এখন শ্রীএকাদশীর প্রভাবে আমার অস্তিত্ব ধবংস হয়ে যাচ্ছে । হে প্রভু! আমার মৃত্যুর পর আপনার অংশগুলো যারা জড়দেহ ধারণ করছে তারা সবাই মুক্তি লাভ করে বৈকুন্ঠধাম প্রাপ্ত হবে । সবাই মুক্ত হয়ে গেলে আপনার লীলার প্রকাশ চান তাহলে শ্রী একাদশীর ভয় থেকে আমাকে বাঁচান । শ্রীএকাদশীতো আপনার বিগ্রহেরই বিস্তৃতী । শ্রীএকাদশীর ভয়ে আমি পালিয়ে মানুষ, পশু, কীট, পাহাড়, বৃক্ষ, স্থাবর ও জঙ্গম, জীবগন, নদী, সমুদ্র, জঙ্গল, স্বর্গ, মর্ত, নরক, দেবতা ও গন্ধর্বগণের নিকট যাই । কিন্তু শ্রীএকাদশীর প্রভাবে মুক্ত স্থান খূঁজে পাই না । হে প্রভু! আপনি আমায় সৃষ্টি করেছেন । আমাকে এমন একটি বাসস্থান দিন যেখানে থাকলে শ্রী একাদশীর ভয় থেকে মূক্ত হতে পারব ।
ব্যাসদেবে জৈমিনেকে বললেন, “এইরূপ প্রার্থনা করে পুরুষ পরমেশ্বর বিষ্ণুর পাদপদ্মে নিপতিত হয়ে কাঁদতে লাগল ।”
অতঃপর বিষ্ণু পাপ পুরুষের দুর্দশা দেখে সহাস্যে বললেন, “ হে পাপ পুরুষ ওঠ, আর কেঁদো না । একাদশীর দিন তোমার আশ্রয় কোথায় হবে, মন দিয়ে শোন । একাদশীর দিন তুমি খাদ্যশস্যে আশ্রয় গ্রহন করবে । আর ভাবনা করো না, কারণ শ্রীএকাদশী সেখানে বাঁধা সৃষ্টি করবে না । পাপ পূরুষকে এইরুপ বলে পরমেশ্বর বিষ্ণু অন্তর্ধান হলেন এবং পাপ পুরুষ নিজের কাজে লিপ্ত হলো ।
সুতারাং সেই থেকে পরম লাভে চেষ্টাবান ব্যক্তিগণ একাদশীর দিন শস্য গ্রহন করে না । বিষ্ণুর আদেশে জড় জগতে সকল প্রকার পাপ কর্ম একাদশীর দিন খাদ্যশস্য আশ্রয় গ্রহন করে । একাদশী পালন করলে সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্তিলাভ করা যায় এবং কখনো নরকগামী হতে হয় না । এক মূষ্টি শস্য খেলে কোটি ব্রাক্ষণ হত্যার পাপ হয় । একাদশী যারা পালন না করে তারা তো পাপীর অধম । সেই কারণে আমি বার বার বলছি যে, একাদশীতে কখনও ভক্ষণ করো না । ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র নির্বিশেষে একাদশী পালন করা অবশ্য করণীয় । ইহাই শুদ্ধ বর্ণাশ্রমের ভিত্তি । একাদশী পালন করলেই সর্বপাপ নাশ হয় ও অবশ্যি বৈকুন্ঠধাম লাভ করা যায় । সূর্যদয়ের এক ঘন্টা ছত্রিশ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত দশমী বিদ্ধা বলা হয় । দশমী বিদ্ধা একাদশী ব্রত পালন করা কখনও করা উচিত নহে । এই সংসারে একাদশীর ন্যায় পবিত্র ব্রত আর নেই । এই বিষ্ণুব্রত পালনে সকল পাপ দূরিভূত হয় । যে ব্যক্তি একাদশী ব্রত পালন করে না সে নরাধম, তাকে নিম্নগামী অবশ্যই হতে হয় । উন্মীলনী, ব্যঞ্জুলি, পক্ষবর্দ্ধনী, ত্রিস্পৃশা, জয়া, বিজয়া, জয়ন্তী, পাপনাশিনি । এই আটটি মহাদ্বাদশী নামে আখ্যায়িত করা হয় ; ইহা পালনে পাতকরাশি ধ্বংস হয় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণতে সুনির্মল ভক্তির উদয় ও ভগবন্ধ ক্ষয় হয় । এই মহাদ্বাদশীর যোগ উপস্থিত হলে ভক্তগণ একাদশীর পরিবর্তে মহাদ্বাদশী ব্রত পালন করেন ।
উন্মীলনী মহাদ্বাদশীঃ- এই উন্মীলনী মহাদ্বাদশী ব্রত পালনে সর্ব্বতীর্থ স্নানের ফল লাভ হয় ।
start here
ব্যঞ্জুলী মহাদ্বাদশীঃ- এই ব্রত পালনে সকল প্রকার পাপরাশিকে সমূলে ধ্বংস করে । উহা অশেষ পাপনাশিনী ।
পক্ষবর্দ্ধনী মহাদ্বাদশীঃ- এই মহাদ্বাদশী ব্রত পালনে মনঃপীড়া কিংবা দুঃখজনিত কোন হরা যোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়া যায় ।
ত্রিস্পৃশা মহাদ্বাদশীঃ- এই ব্রত পালনে দশ সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল পাওয়া যায় ।
জয়া মহাদ্বাদশীঃ- এই ব্রত পালনে নরক থেকে রক্ষা ও অগ্নিষ্ঠোমাদি যজ্ঞের ফল পাওয়া যায় ।
বিজয়া মহাদ্বাদশীঃ- এই তিথিতে বামন দেবের আবির্ভাব হয়েছিল । ঐ দিন উপবাসে এক বৎসরের একাদশী পালনের ফল পাওয়া যায় ।
জয়ন্তী মহাদ্বাদশীঃ- রোহিণীনক্ষত্রে শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হয়েছিল বলে জয়ন্তী বলা হয় । এই ব্রত পালনে অভিষ্ঠপ্রদ ফল লাভ বিষ্ণু লোকে গমন হয় ।
পাপ্নাশিনী মহাদ্বাদশীঃ-এই মহাদ্বাদশী পালনে একাদশীর সহস্র গুন ফল লাভ হয় ।
No comments