নিজেকে জানার প্রয়োজনীয়তা

Who Am ??? আমি কে ???

নিজেকে জানার প্রয়োজনীয়তা
আমি কে? এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এ প্রশ্নের উত্তর মানব জীবনের পূর্ণতা বয়ে আনে । দুর্ভাগ্যবশত খুব কম সংখ্যক মানুষ নিজেকে এ প্রশ্ন করে , তবে কদাচিৎ তার সঠিক উত্তর পায় । এমনকি এ ধরনের প্রশ্ন তাদের মাথায়ও আসে না । যখনই পূর্ব দিগন্তে সূর্য উদিত হয় , মানুষ ঘুম থেকে জেগে উঠে । ঘুম থেকে জেগে উঠার সাথে সাথে মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে শুরু করে । যেখানেই মানুষ আছে সেখানেই অনেক প্রশ্ন ও উত্তর আছে । বাড়িতে সন্তান-সন্ততি ও মাথা পিতার মধ্যে প্রশ্নোত্তর , স্কুলে ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে প্রশ্নোত্তর , হাসপাতালে রোগী এবং ডাক্তারের মধ্যে প্রশ্নোত্তর , আদালতে বিচারক এবং আইনজীবীদের মধ্যে প্রশ্নোত্তর । কিন্তু কতজন এ প্রশ্ন করে আমি কে? মানুষ কদাচিৎ নিজেকে এ প্রশ্ন করে । কিন্তু এ প্রশ্ন মানব জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । মানব জীবনের পরম উদ্দেশ্য , আমি কে? তা খুঁজে বের করা । 
শাস্ত্রে বর্ণিত আছে , মানুষের জীবন শুরু হয় যখন মানুষ নিজসত্তা এবং ভগবান সমন্ধে অনুসন্ধান করে- ‘অথাতো ব্রক্ষজিজ্ঞাসা’ । ব্রক্ষজিজ্ঞাসা করার কৌতুহল থেকে আমরা বুঝতে পারি , কে মানুষ আর কে এখন ও মানুষ নয় । পশুরা শুধু আহার , নিদ্রা , মৈথুন ও আত্মরক্ষার অনুসন্ধান করে । দুর্লভ মানব দেহ লাভ করার পরও যদি কেউ কেবল এ চারটি বিষয়েরই অনুসন্ধান করে তবে সে পশুর চেয়ে উত্তম নয় । শাস্ত্রে দ্বিপদ পশু সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে । যে ব্যক্তি কেবল এ চারটি বিষয়ের প্রতি অনুসন্ধিৎসু এবং যারা পরম সত্যকে অনুসন্ধান করে না তারা দ্বিপদ পশুর মতোই । দেখতে হয়তো মানুষের মতো দুই হাত , দুই পা , এক মাথাবিশিষ্ঠ হতে পারে; কিন্তু তিনি পশুর মতোই যদি পরম সত্য বা আত্মতত্ত্ব সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী না হয় । 
শ্রীমদ্ভাগবতে (১/২/১০/) বর্ণনা করা হয়েছেঃ
কামস্য নেন্দ্রিয়প্রীতির্লাভো জীবেত যাবতা । 
জীবস্য তত্ত্বজিজ্ঞাসা নার্থো যশ্চেহ কর্মভিঃ 
“ইন্দ্রিয় সুখভোগকে কখনোই জীবনের উদ্দেশ্য বলে গ্রহন করা উচিত নয় । সুস্থ জীবনযাপন করা অথবা আত্মাকে নির্মল রাখার বাসনাই কেবল করা উচিত , কেননা মানব জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরম-তত্ত্ব সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা । এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কর্ম করা উচিত নয় । 
আমাদেরকে অবশ্যই জাননে হবে যে , জীবনে প্রধান লক্ষ্য হলো ‘ আমি কে?’ এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা । এ প্রশ্ন জানা ব্যতীত মানব জীবন অসম্পূর্ণ এবং অনর্থক । এ বিষয়ে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ এর সূচানাতে শ্রীল প্রভুপাদ উল্লেখ করেছেন- 
“হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কেবল দুই-একজন তাদের ক্লেশ-জর্জরিত অনিত্য অবস্থাকে উপলব্ধি করতে পেরে অনুসন্ধান করতে শুরু করে , ‘আমি কে?’ ‘আমি কোথা থেকে এলাম?’ ‘কেন আমি এ জটিল অবস্থায় পতিত হয়েছি?’ মানুষ যতক্ষন পর্যন্ত না তার মোহাচ্ছন্ন অবস্থা কাঠিয়ে উঠে দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উদ্ধার লাভের জন্য অনুসন্ধান করছে এবং যতক্ষন পর্যন্ত না সে বুঝতে পারছে যে , সে দুঃখ-দুর্দাশা চায় না , ততক্ষণ তাকে যথার্থ মানুষ বলে গণ্য করা চলে না । মানুষের মনুষ্যত্বের সূচনা তখনই হয় , যখন তার মনে এ সমস্ত প্রশ্নের উদয় হতে শুরু করে । ব্রক্ষসূত্রে এ অনুসন্ধানকে বলা হয় ব্রক্ষজিজ্ঞাসা । অথাতো ব্রক্ষজিজ্ঞাসা । 
“মানব-জীবনে এ ব্রক্ষজিজ্ঞাসা ব্যতীত আর সমস্ত কর্মকেই ব্যর্থ বা অর্থহীন বলে গণ্য করা হয় । তাই যারা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন , ‘আমি কে?’ ‘আমি কোথা থেকে এলাম?’ ‘ আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি?’ ‘মৃত্যুর পরে আমি কোথায় যাবো?’ তাঁরাই ভগবদ্গীতার প্রকৃত শিক্ষার্থী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন । এ তত্ত্ব যিনি আন্তরিকভাবে অনুসন্ধান করেন , তিনি ভগবানের প্রতি অকৃত্রিম ভক্তি অর্জন করেন । অর্জুন ছিলেন এমনই একজন অনুসন্ধানী শিক্ষার্থী । (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-মুখবন্ধ) 
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যখন বারাণসীতে শ্রীল সনাতন গোস্বামীর সাথে মিলিত হন তখন সনাতান গোস্বামী মহাপ্রভুকে এ প্রশ্ন করেছিলেন-‘আমি কে?’ যদিও শ্রীল সনাতন গোস্বামী একজন পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন এবং তৎকালীন বাংলার সম্রাট হোসেন শাহের রাজসভায় প্রধান্মন্ত্রী ছিলেন তথাপী নিজেকে মুর্খা বিবেচনা করে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নিকট অতন্ত্য বিনয়ের সাথে এ প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করেছিলেন । 
Who Am I
Who Am I


শ্রীল সনাতন গোস্বামী অতন্ত্য দৈন্য সহকারে দন্তে তৃণ ধারণপূর্বক শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শ্রীপাদপদ্ম জড়িয়ে ধরে গভীর বিনয়ের সঙ্গে বলতে লাগলেনঃ
“অত্যন্ত নিচ স্কুলে আমার জন্ম হয়েছিল , আমার সঙ্গীরা অত্যন্ত অধঃপতিত । পাপে পূর্ণ বিষয়-রুপ কূপে পতিত হয়ে আমি আমার জীবন কাটিয়েছি । কী করলে যে আমার ভালো হবে এবং কী করলে আমার খারাপ হবে , সে সমন্ধে কোনো জ্ঞানই নেই । কিন্তু তবুও , জাগতিক ব্যবহারে লোকেরা আমাকে পণ্ডিত বলে মনে করে , এবং আমিও মনে করি যেন তা সত্যি । কৃপা করে আপনি যখন আমাকে উদ্ধার করেছেন , তখন আপনি আমাকে বলুন , আমার কী করা কর্তব্য?” আরো জানতে start here

1 comment:

Powered by Blogger.